
গফুর মিয়া চৌধুরী, উখিয়া :
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও রামুর মানব পাচারকারীরা মাঠে আবারো প্রকাশ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে বেশ মাস খানিক ধরে অন্যত্র লুকিয়ে থাকার পর নিজ এলাকায় আবারো ফিরে এসেছে মানব পাচারকারীরা। উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা শামশুল আলম সোহাগ, রুস্তম আলী, আবুল কালাম, লালু মাঝি, বেলাল উদ্দিন (লাল বেলাল), ফয়েজ আহাম্মদ, ছৈয়দ আলম, মোহাম্মদ আলম মাদু, ইউসুফ জালাল, ফরিদ মাঝি, রেজিয়া আক্তার (রেবি ম্যাডাম) স্বামী- নুরুল কবির, মজলু মাঝি, রামুর খুনিয়া পালং ইউনিয়নের গোয়ালিয়া গ্রামে মোস্তাক আহাম্মদ, আব্দুল গণি, মনছুর আলীসহ অনেকই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর হুংকার ছাড়ছে, আমরা আবার ফিরে এসেছি, এবার দেখিয়ে ছাড়ব…।
তারা সবাই সাম্প্রতিক কালে মানব পাচারের এয়ারপোর্ট নামে পরিচিত কক্সবাজারের উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের রেজু খালের তীরবর্তী পশ্চিম সোনাইছড়ি এলাকার বাসিন্দা। তাদের সবার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মানব পাচারের সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগে মামলা রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, তাদের এলাকায় ফিরে আসার বিষয়টি জানানো হলেও স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরব। এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান গতকাল সকালের কক্সবাজারকে বলেন, শুনেছি মানব পাচার কারীরা এলাকায় আবার ফিরে এসেছে। তাদের অপতৎপরতার খবর পাচ্ছি। ইতিমধ্যে কয়েকজন মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানব পাচারকারীদের রেহাই নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাকাবাসীর কাছে মানব পাচারকারীরা অত্যন্ত দৃর্ধর্ষ প্রকৃতির মানুষ। গত মে ও জুন মাসে মালয়েশিয়া ও থাইল্যন্ডে গণকবর উদঘাটনের পর থেকে চিহ্নিত এসব মানব পাচারকারী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিল। পুলিশ তাদের বাড়িতে সাড়াঁশি অভিযান চালায় দফায় দফায়। কিন্তু তাদের ধরা সম্ভব হয়নি। অনেক টাকা-পয়সা ও বিলাশ বহুল বাড়ি-ঘরের মালিক সবাই। প্রতিজনেরই আলিশান বাড়ী রয়েছে এলাকায়। তারা প্রলোভনে ফেলে বা জোর করে প্রতিরাতেই রেজু খালের সেই এয়ারপোর্ট দিয়ে দলে দলে লোক পাচার করেছে সাগর পথে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মানব পাচারের একাধিক মামলা রয়েছে স্থানীয় থানায়। তাদের বিরুদ্ধে এলাকার যুবসমাজ ও সচেতন মহল প্রতিবাদ জানাতে গড়ে তুলেছে মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটি। ইতিমধ্যে মানব পাচার প্রতিরোধে তারা মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন এলাকায় এলাকায়। গড়ে তুলেছেন জনমত। এছাড়া স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশের অনেক সদস্য ও মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে জনমত গঠনের কাজ করেছেন। কিন্তু এলাকায় আবারো মানব পাচারকারীরা ফিরে আসায় জীবন নিয়ে সংস্কিত প্রতিবাদী যুব সমাজসহ এলাকার নিরহ মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পশ্চিম সোনাইছড়ি বাদামতলী ষ্টেশনের একটি দোকানে গত কয়েকদিন আগে সকালে মানব পাচারকারীর একটি দল বসে প্রকাশ্যে সভা করেছে। এরপর ওই ষ্টেশনে দাড়িয়ে উপস্থিত লোকজনদের সামনে হুমকি দিয়ে বলেছে, এলাকার যারা তাদের বিরুদ্ধে মামলা মোকাদ্দমায় সহযোগীতা করেছে এবং মানব পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করেছে তারা তাদের এবার দেখিয়ে ছাড়বে।
এ প্রসঙ্গে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ প্রেমানন্দ বলেন, মানব পাচারকারীদের ধরতে ঘরে ঘরে যাওয়া হচ্ছে। কোন মানব পাচারকারীর অবস্থানের খবর পেলে দ্রুত পুলিশ অভিযান পরিচালিত করে। এতে কোন সন্দেহ নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এই রিপোর্ট লেখাকালীন সময়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী সকালের কক্সবাজারকে বলেছেন, উখিয়া থানায় যে কয়টি
মানব পাচারের মামলা হয়েছে, সব মামলায় পুলিশ বাদী। পুলিশ একটি মামলায় ৫-৬ জনকে আসামী করে। পরে প্রতি মামলা থেকে ৩/৪জনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সার্জশীট থেকে বাদ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ নিরহ মানুষকে আসামী করে পুলিশ হয়রানি করছে এবং অদ্যবদি উখিয়ার বহুল আলোচিত মানব পাচারকারী ফয়েজকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পাঠকের মতামত